রক্ত মানুষের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। কিন্তু মানুষে মানুষে কতো তফাৎ! কেউ রক্ত দেয়। আবার কেউ রক্ত নেয়। কেউ কেউ তো এমনও আছে, যারা রক্ত বইয়ে দিয়ে নিষ্ঠুর জিঘাংসায় লিপ্ত হয়। খুন-পিয়াসী ‘খুনিয়া’ হয়ে ওঠে। মানবতার গায়ে এঁকে দেয় কলংক-চিহ্ন। কিন্তু এ রক্তই অন্যজন ইসলামী ভ্রাতৃত্ব ও মানবতার অমর চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে মুমূর্ষ ভাইয়ের জন্য আনন্দচিত্তে ও অকাতরে বিলিয়ে দেয়। শুধু সওয়াব-পুণ্যের আশায়; আর একটুখানি হাসির ঝিলিক দেখতে।
রক্ত সাধারণত শরীর থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর নাপাক হিসেবে সাব্যস্ত হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় (প্রয়োজন ও কারণ ছাড়া) এক জনের রক্ত অন্যের শরীরে স্থানান্তর করা হারাম।
তাই রক্ত গ্রহণের বিকল্প নেই, এমন অসুস্থ ব্যক্তিকে রক্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে নিম্নে লিখিত বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে-
এক. যখন কোনো অসুস্থ ব্যাক্তির জীবননাশের আশংকা দেখা দেয় এবং অভিজ্ঞ ডাক্তারের মতে তার শরীরে অন্যের রক্ত দেওয়া ব্যতীত বাঁচানোর কোনো পন্থা না থাকে, তখন রক্ত দিতে কোনো অসুবিধা নেই। বরং এ ক্ষেত্রে ইসলাম আরো উৎসাহ দিয়েছে।
দুই. রক্ত দেওয়া প্রয়োজন। অর্থাৎ, অসুস্থ ব্যক্তির মৃত্যুর আশংকা নেই বটে, কিন্তু রক্ত দেওয়া ছাড়া তার জীবনের ঝুঁকি বাড়ে অথবা রোগমুক্তি বিলম্বিত হয়; এমন অবস্থায় রক্ত দেওয়া জায়েজ ও জরুরি।
তিন. যখন রোগীর শরীরে রক্ত দেওয়ার খুব বেশি প্রয়োজন দেখা দেয় না, বরং রক্ত না দেওয়ার অবকাশ থাকে; তখন অযথা রক্ত দেওয়া থেকে বিরত থাকা চাই।
চার. যখন জীবননাশের এবং অসুস্থতা বিলম্বিত হওয়ার আশংকা থাকে না, বরং শুধুমাত্র শক্তি বৃদ্ধি এবং সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্দেশ্য হয়; সে অবস্থায় ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক রক্তদান জায়েজ নয়।
রক্ত ক্রয়-বিক্রয়ের বিধান
রক্ত বিক্রি জায়েজ নয়। কিন্তু যে শর্তের ভিত্তিতে প্রথম সূরতে রক্ত দেয়া জায়েজ সাব্যস্ত হয়েছে, ওই অবস্থায় যদি যথা রক্ত বিনামূল্যে পাওয়া না যায়, তখন তার জন্য মূল্যে দিয়ে রক্ত ক্রয় করা জায়েজ। তবে যে রক্ত দিবে তার জন্য রক্তের মূল্য নেয়া জায়েজ নয়। (জাওয়াহিরুল ফিকহ, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ৩৮)
অমুসলিমের রক্ত মুসলিমের শরীরে স্থানান্তরের বিধান
অমুসলিমের রক্ত মুসলিমের শরীরে স্থানান্তর জায়েজ। মুসলিম আর অমুসলিমের রক্তে কোনো প্রভেদ নেই। কিন্তু শরিয়তসিদ্ধ কথা হলো, কাফের-ফাসেকের স্বভাবে মন্দ ও নিন্দনীয় প্রভাব রয়েছে। কারণ তারা নাপাক ও হারাম খাদ্য গ্রহণের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। আর এতে করে খাবারের প্রভাব রক্ত-মাংসে পড়ে। তাই সে ক্ষেত্রে অমুসলিমের মন্দ স্বভাব-চরিত্রের প্রভাব মুসলিমের স্বভাব-চরিত্রে রক্তের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হওয়ার বেশ আশংকা থেকে যায়। (এজন্য শিশুর জন্য পাপাচারী মহিলার দুধ পান করা মাকরুহ করা হয়েছে। ) সুতরাং এসব ক্ষতির দিকে লক্ষ্য করে, অমুসলিমের রক্ত নেওয়া থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকা উচিত। (জাওয়াহিরুল ফিকহ, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ৪০)
স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে রক্তদানের বিধান
স্বামীর রক্ত স্ত্রীর শরীরে, স্ত্রীর রক্ত স্বামীর শরীরে প্রবেশ করানো জায়েজ। তারা একে-অপরের জন্য অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের মতো। তারা একে-অন্যকে রক্ত দিলে বিয়ের ওপর কোনো প্রভাব পড়ে না। বৈবাহিক সম্পর্কও যথারীতি বহাল থাকে। কেননা ইসলামী শরিয়তের সূত্র মতে, মাহরামের সম্পর্ক দুধ পানের মাধ্যমে সাব্যস্ত হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট বয়সের প্রয়োজন। আর দুধ পানের দ্বারা মাহরামের সম্পর্ক স্থাপনের বয়স আড়াই বছর। সুতরাং আড়াই বৎসর পর কোনো মহিলার দুধ পান করার দ্বারা যেমন মাহরাম সাব্যস্ত হয় না, তেমনি রক্ত নেওয়া ও দেওয়ার মাধ্যমে স্বামী স্ত্রীর মাঝে মাহরামের সম্পর্ক তৈরি হয় না। (জাওয়াহিরুল ফিকহ, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ৪০)
ইসলাম বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
Wednesday, 16 June 2021
Author: বন্ধু অনলাইন রক্তদান সংগঠন
Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.
এ সম্পর্কিত আরও খবর
কত দিন পর পর রক্তদান করবেন জানেন কি? রক্তদান হল কোন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের স্বেচ্ছায় রক্ত দেবার প্রক্রিয়া। এই দান করা রক্ত
রক্তদানের ১০টি উপকারিতা কখনও ভেবে দেখেছেন কি, আপনার দান করা একব্যাগ অর্থাৎ মাত্র ৩৩০মিলি রক্ত একজন মানুষের জীবন রক্ষ
রক্তদানে সাবধনতার সম্পর্কে কী জানেন? কাছের কারো জন্য রক্তের প্রয়োজন হলেই বোঝা যায়, রক্তের বন্ধন যে অমূল্য। আজকাল রক্ত পাওয়া আগের চ
কতবার সিজার করা নিরাপদ? স্বাভাবিক ডেলিভারি ঝুঁকিপূর্ণ হলে মা ও শিশুর সুস্থতার স্বার্থে সিজারিয়ান পদ্ধতিতে ডেলিভারির
রক্তদানের পর হাতে কালচে দাগ?? রক্তদানের পর হাতে কালচে দাগ? রক্তদানের পর কারো কারো হাতে কালচে দাগ হয়। এতে ভয় পাবার কিছু নেই।
রক্তদানের আগে ও পরে কী করবেন আত্মীয়-স্বজন কিংবা মানবতার সেবায় এগিয়ে আসতে আমাদের মধ্যে অনেকেই (প্রাপ্তবয়স্ক) স্বেচ্ছায় রক্ত
0 coment rios: